সর্বজনীন পেনশন সুবিধা পেতে করণীয় কি?- ৪টি পেনশন স্কিম 4 Pension Schemes

সর্বজনীন পেনশন সুবিধা পেতে করণীয় কি
5/5 - (26 votes)

সর্বজনীন পেনশন সুবিধা পেতে কি করতে হবে, কতগুলো পেনশন স্কিম রয়েছে,  পেনশনের চাঁদা কিভাবে প্রদান করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে upension info তে আপনাকে স্বাগতম।

অবশেষে সকল ধরনের ক্রাইটেরিয়া সম্পন্ন করে চালু হলো সর্বজনীন পেনশন স্কিম কর্মসূচি। তবে এটি কেবলমাত্র সর্বসাধারণ মানুষের জন্য প্রযোজ্য হবে। কোন সরকারি চাকরিজীবী অথবা সাহিত্য শাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ব্যক্তি সর্বজনীন পেনশন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন না। 

সেই সাথে বাংলাদেশ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার স্বার্থে যারা কাজ করে যাচ্ছেন এবং বিভিন্ন ধরনের ভাতা পাচ্ছেন তারাও সর্বজনীন পেনশন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন না। 

তবে যদি আপনি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় যে সকল সুবিধা পাচ্ছেন তা বর্জন করেন তবেই কেবলমাত্র সর্বজনীন পেনশন অংশগ্রহণ করতে পারবেন। সর্বজনীন পেনশন একটি অত্যন্ত কার্যকরী পদক্ষেপ। যেকোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী ব্যক্তি চাকরি থেকে পদত্যাগ নিয়ে অবসরে গিয়েও পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।

দেশের রাষ্ট্রীয় নতুন এ আইন অনুযায়ী সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালায় ধারা (৪)-এর উপধারা (৩)-এ উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাভুক্ত ব্যক্তিরা এই সর্বজনীন পেনশন সুবিধা গ্রহণ করার জন্য আবেদন করতে পারবে না।

তবে তবে যদি কেউ এই পেনশন সুবিধা ভোগ করতে চায় তবে, সংশ্লিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা তাকে বর্জন করতে হবে।

সর্বজনীন পেনশন সুবিধা কারা পাবেন?

সর্বজনীন পেনশন মূলত ১৮ থেকে ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য। তবে কিছু শর্ত সাপেক্ষে ৫০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকগণ পেনশন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। 

৫০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য শর্ত হলো:

  1. যাবতীয় সঠিক ডকুমেন্টস দিয়ে প্রথমে পেনশনার রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
  2. পেনশন আবেদন করার দিন থেকে টানা ১০ বছর নির্দিষ্ট স্কিমের চাঁদা পরিশোধ করতে হবে।

সর্বজনীন পেনশনের চাঁদা কত টাকা? 

সর্বজনীন পেনশন সুবিধা পেতে সর্বনিম্ন মাসিক চাঁদা হবে এক হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। তবে সর্বসাধারণের সুবিধার জন্য পেনশনের চাঁদা দেওয়ার ক্ষেত্রে ছয়টি স্কিম এর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে চারটি পেনশন স্কিম চালু আছে। প্রত্যেকটি পেনশন স্কিমের জন্য আলাদা আলাদা চাঁদা প্রদান করতে হবে। 

বিশেষ দ্রষ্টব্য: শুধুমাত্র সমতা স্কিমের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা চাঁদা জমা করা যাবে। আপনি যদি দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন তাহলে আপনাকে দিতে হবে ৫০০ টাকা এবং সরকার দিবে ৫০০ টাকা। 

সহজ ভাষায় যদি বলি, আপনি ৫০০ টাকা জমা দিলে আপনার একাউন্টে সরকার আরো ৫০০ টাকা যুক্ত করে দিবে। যার ফলে আপনার সমতা স্কিমের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা জমা হয়ে যাবে। তবে এই পেনশন সুবিধা কেবলমাত্র সমতা স্কিমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। 

তবে যেহেতু বিভিন্ন স্কিমের চাঁদা বিভিন্ন রকম তাই নিচের আর্টিকেলগুলো পড়ে সর্বজনীন সকল পেনশন স্কিমের সাদা সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।

পেনশনের চাঁদা কোথায় জমা দিতে হবে?

এটি খুবই ভালো খবর যে, পেনশনের চাঁদা এবং পেনশন গ্রহীতার মুনাফা নগদ বা ক্যাশ টাকায় লেনদেন করার কোন অপশন নেই। ব্যক্তিকে পেনশনের চাঁদা অনলাইনে জমা দিতে হবে এবং চাঁদা প্রদান কারীর বয়স পূর্তি হলে তার দেয়া ব্যাংক একাউন্ট অথবা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল একাউন্টে লেনদেন করা হবে। 

পেনশনের চাঁদা ঘরে বসে দেয়া যাবে?

চাইলে যে কেউ সর্বজনীন পেনশন এর চাঁদা ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে জমা দিতে পারবেন। ঘরে বসে পেনশনের চাঁদা অনলাইনে জমা দিতে অবশ্যই ইউপেনশন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করে সেখানে সোনালী ব্যাংক এবং বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং ফিনান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করে চাঁদা প্রদান করতে পারবেন।

দেখে নিন কিভাবে অনলাইনে পেনশনের চাঁদা জমা দিবেন।

পেনশনের চাঁদা কীভাবে দেওয়া যাবে?

যে কেউ পেনশন সুবিধা ভোগ করতে চাইলে অবশ্যই তাকে ইউপেনশন ওয়েবসাইট ভিজিট করে সেখানে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী সকল বাংলাদেশী নাগরিক তাদের ভোটার আইডি কার্ড ব্যবহার করে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবে।

এগুলো পড়তে পারেন,

বিশেষ দ্রষ্টব্য: যে সকল রেমিটেন্স যোদ্ধা অর্থাৎ প্রবাসী ব্যক্তি রয়েছে তারা চাইলে এনআইডি কার্ডের পরিবর্তে অথবা জাতীয় পরিচয় পত্র ছাড়া পেনশন সুবিধা গ্রহণ করার জন্য আবেদন করতে পারবে। 

তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের বৈধ পাসপোর্টের সাথে কানেক্টেড ব্যাংকিং চ্যানেল থাকতে হবে। অনুমোদিত মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা এবং বৈধ অনলাইন অথবা অফলাইন এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রবাস পেনশন স্কিমে চাঁদা দিয়ে পেনশন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।

এবার চলুন জেনে নেই কীভাবে চাঁদা দেওয়া যাবে।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ইউপেনশন (https://upension.gov.bd) তে রেজিস্ট্রেশন করার সময় একটি ইউনিক আইডি দেয়া হবে। সেই ইউনিক আইডি ব্যবহার করে যে কোন পেনশন স্কীমের চাঁদা পরিশোধসহ সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের সমস্যা সমাধান করা যাবে। এবং পেনশনের ইউনিক আইডি দিয়ে চাঁদা প্রদানকারীর একাউন্টের সব অবস্থা ট্র্যাক করা যাবে। 

কিভাবে পেনশন সুবিধা পাওয়া যাবে? 

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করে তা ৬০ বছর পর্যন্ত চাঁদা দিতে হবে। এবং ৬০ বছর বয়সের পর থেকে একজন গ্রাহক যতদিন বেঁচে থাকবেন তিনি পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। যদি কোন কারণে চাঁদা দাতা নির্ধারিত পরিমাণের চাঁদা পরিশোধের পর মারা যান তাহলে, তার দেয়া নমিনি বা উত্তরাধিকারী সর্বোচ্চ ১৫ বছর পেনশন পাবেন। 

তবে উল্লেখ্য যে,  যাদের বয়স সবেমাত্র ১৮ বছর তারাই এই পেনশন সুবিধায় অধিক লাভবান হবেন। কেননা ১৮ বছর বয়সে যারাই যুক্ত হবে তাদের বয়স ক্রমান্বয়ে বাড়বে এটাই স্বাভাবিক, আর আনুপাতিক পেনশনের চাঁদার হারে সুবিধা ততটাই বাড়বে। 

রেজিস্ট্রেশন করে প্রথম চাঁদা দেয়ার দিন হতে সর্বনিম্ন ২.৩০ গুণ থেকে সর্বোচ্চ ১২.৩১ গুণ টাকা বেশি পেনশনের টাকা পাবেন।

পেনশন থেকে ঋণ নেওয়ার উপায়

আপনি হয়তো আর্টিকেল পড়ে ইতিমধ্যে জেনে গেছেন, ৭৫ বছর বয়সের আগে যদি কোন পেনশনার ব্যক্তি মারা যায় তবে পরবর্তীতে যে সময়কাল রয়েছে তার নমিনি অবশিষ্ট পেনশন পাবেন। 

যেকোনো প্রয়োজনে চাঁদাদাতা আবেদন করে পেনশন একাউন্টে জমাকৃত টাকার  সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে নিতে পারবেন। তবে এর জন্য নির্দিষ্ট ফি সহ সেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

পেনশন একাউন্ট বাতিল হলে করণীয় কি?

দেখুন না আপনি যদি সর্বজনীন পেনশন অ্যাকাউন্ট তৈরি করে থাকেন এবং সেখানে টাকা জমাতে থাকেন তবে অবশ্যই আপনাকে কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 

  • পেনশন রেজিস্ট্রেশন করার সময় অবশ্যই নির্ভুল তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
  • ভুয়া তথ্য দিয়ে একাউন্ট রেজিস্টার করলে পরবর্তীতে সেই পেনশন একাউন্ট বাতিল হবে এবং আপনি কোন ধরনের টাকা ফেরত পাবেন না।
  • পরপর তিন মাসের পেনশন স্কিমের চাঁদা বকেয়া রাখা যাবে না। তাহলে আপনার একাউন্টের সাময়িকভাবে স্থগিত হয়ে যাবে।

হবে যদি পরপর তিন মাসের চাঁদা বকেয়া পড়ে যায় তাহলে পরবর্তী সময়ে নির্দিষ্ট বিলম্ব ফিস প্রদানের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন একাউন্ট পুনরায় সচল করা যাবে। বিশেষ দ্রষ্টব্য: যদি আপনার পেনশনের চাঁদা একমাস বিলম্ব হয় তাহলে আপনাকে কোন ধরনের ফি প্রদান করতে হবে না। আর যদি এক মাসের অধিক চাঁদা দিতে বিলম্ব হয় তাহলে প্রতি মাসে সর্বনিম্ন এক শতাংশ জরিমানা দিতে হবে।

উপসংহার

সর্বজনীন পেনশন সুবিধা পেতে কি করতে হবে, কতগুলো পেনশন স্কিম রয়েছে, পেনশনের চাঁদা কিভাবে প্রদান করবেন, পেনশন থেকে ঋণ নেওয়ার উপায়, পেনশন একাউন্ট বাতিল হলে করণীয় কি? এই সমস্ত বিষয়বস্তু সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

আশা করছি সর্বজনীন পেনশন সুবিধা এবং অসুবিধা গুলো সম্পর্কে আপনি সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছেন। Upension সম্পর্কে আপনার আরো কিছু জানা থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে আপনার মূল্যবান মতামত লিখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe now

Give us a call or fill in the form below and we will contact you. We endeavor to answer all inquiries within 24 hours on business days.