সর্বজনীন পেনশন স্কিম

সুরক্ষা স্কিম কি
5/5 - (1 vote)

সর্টেবজনকসই উন্নয়নের অন্যতম শর্ত হলো- উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সকল নাগরিককে সম্পৃক্ত করা এবং সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। বৈষম্যহীন সামাজিক কাঠামোয় সকল নাগরিকের বিশেষ করে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪ ও ১৫ অনুচ্ছেদে এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনয়নে প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

এ লক্ষ্যে তিনি ২০০৮ সনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে একটি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তন করার বিষয়ে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করাসহ ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের ঘোষণা প্রদান করেন। এর ধারাবাহিকতায় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ প্রণীত হয় যার অধীনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ১৭ আগস্ট ২০২৩ তারিখ সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন ঘোষনা করেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী জনকল্যাণমূখী পদক্ষেপ, যা সকল নাগরিকের অবসরকালীন আর্থিক মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচিত হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শনের আওতায় ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী ও সমৃদ্ধ উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সমাজের বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে একটি সুসংগঠিত সামাজিক সুরক্ষা কাঠামো বিনির্মান করা হচ্ছে।

রিটার্ণের ভিত্তিতে পেনশনের মাসিক পরিমাণ নির্ধারিত হবে।

সর্বজনীন পেনশনের স্কিমসমূহ কি কি?

 

(ক) প্রবাস,

(খ) প্রগতি,

(গ) সুরক্ষা এবং

(ঘ) সমতা।

প্রবাস স্কিম

(প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য প্রবাস স্কিম): বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোন বাংলাদেশী নাগরিক তার অভিপ্রায় অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধের শর্তে নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

প্রবাস হতে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করাসহ প্রয়োজনে স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন। পেনশন স্কিমের মেয়াদ পূর্তিতে পেনশনার দেশীয় মুদ্রায় পেনশন প্রাপ্য হবেন। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ২০০০/-, ৫০০০/-, ৭৫০০/- এবং ১০০০০/- টাকা।

প্রবাসী বাংলাদেশীগণ দেশে অবস্থানরত তাদের পরিবারের সদস্যদের (বাবা, মা, ভাই, বোন, স্বামী বা স্ত্রী) নামেও পেনশন স্কিম (সুরক্ষা) চালু করতে এবং মাসিক জমা পরিশোধ করতে পারবেন।

প্রগতি স্কিম

(ব্যক্তি মালিকানাধীন/বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য প্রগতি স্কিম): ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি/কর্মচারী বা উক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিক নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে তাদের কর্মচারীদের জন্য এই স্কিমে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে স্কিমের চাঁদার ৫০% কর্মী এবং বাকী ৫০% প্রতিষ্ঠান প্রদান করবে। এক্ষেত্রে upension সিস্টেমে সহজেই কোম্পানীর নিবন্ধনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানী নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।

অতঃপর উক্ত কোম্পানীয় কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ নিবন্ধন করবেন। কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ না করলেও, উক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোন কর্মচারী নিজ উদ্যোগে এককভাবে এ স্কিমে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ২০০০/-, ৩০০০/-, ৫০০০/-  এবং ১০০০০/- টাকা।

সুরক্ষা স্কিম

(স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকগণের জন্য সুরক্ষা স্কিম): অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন: কৃষক, রিক্সাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতিসহ সকল অনানুষ্ঠানিক কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ১০০০/-, ২০০০/-, ৩০০০/- এবং ৫০০০/- টাকা।

সমতা স্কিম

(স্বকর্মে নিয়োজিত অতি দরিদ্র নাগরিকগণের জন্য): বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক, সময় সময়, প্রকাশিত আয় সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র্য সীমার  নিম্নে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের ব্যক্তিগণ [যাদের বর্তমান আয় সীমা বাৎসরিক অনূর্ধ্ব ৬০ (ষাট) হাজার টাকা, তবে বার্ষিক আয়ের সমর্থনে কোন প্রকার প্রমানক দাখিলের প্রয়োজন নেই] তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ১০০০/- টাকা, যার ৫০০ টাকা চাঁদাদাতা প্রদান করবেন এবং অবশিষ্ট ৫০০ টাকা সরকার অনুদান হিসেবে প্রদান করবে।

শেষ কথাঃ

একটি উন্নত রাষ্ট্রকে কেবল জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি, জিডিপি’র আকার ও জনগণের মাথাপিছু আয় দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা যায় না। নাগরিকদের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তাও উন্নত রাষ্ট্রের অন্যতম নিয়ামক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। উন্নয়নশীল দেশসমূহে নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সর্বজনীন পেনশনের ধারণা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। এ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক গৃহীত সর্বজনীন পেনশন স্কিম নাগরিকদের বৃদ্ধ বয়সে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ একটি অধিকতর কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে, যা হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২০৪১ সালের উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নের সমার্থক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe now

Give us a call or fill in the form below and we will contact you. We endeavor to answer all inquiries within 24 hours on business days.